বুধবার | ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাবিনাদের নিয়ে কলকাঠি নাড়ছে কারা

ফুটবল ভবনের ক্যাম্পে থাকা খেলোয়াড়রা দুই ভাগে বিভক্ত। সিনিয়র কিছু ফুটবলার ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারকে চায় না। পিটার থাকলে তারা থাকবেন না। গণ অবসরে যাবেন। কোচ সরিয়ে দেওয়ার আন্দোলনে নেমেছেন সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকার, মাসুরা পারভিন, মনিকা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমারা। অন্যদিকে ক্যাম্পের কিছু ফুটবলার রয়েছেন তারা সিনিয়রদের পক্ষে না।

অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের নেতৃত্বে পরশু, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৮-১০ জন ফুটবলার সংবাদ সম্মেলন করে পিটারের বিপক্ষে অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন। তিন পৃষ্ঠার চিঠি ফুটবলের অনেকের হাতেই চলে গেছে, গতকাল সেসব নিয়ে দিনভর ফুটবল অঙ্গন ছিল আলোচনা-সমালোচনা মুখর। সবার মুখে একটা প্রশ্ন ফুটবলাররা কি এভাবে কোচের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারেন কি না। এই কোচ থাকলে খেলব না-এমন কথা বলতে পারেন কি না।

কোচের বিপক্ষে যেসব অভিযোগ উঠানো হয়েছে তার পক্ষে শক্ত যুক্তি দেখাতে পারেননি সাবিনারা। তিন পৃষ্ঠার চিঠিতে হাই প্রোফাইল ব্রিটিশ কোচের টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন। শুধু ফুটবল দুনিয়া নয়, খেলাধুলার দুনিয়ায় যেসব কারণে খেলোয়াড়রা কোচের অপসারণ দাবি করেন, সে ধরনের কোনো অভিযোগ দেননি সাবিনারা।

তারা বলেছেন, ‘আমাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করেন কোচ, সিনিয়র জুনিয়র নিয়ে বিভাজন করেন, বডি শেমিং করেছেন।’ মেয়েদের ব্যক্তি জীবন নিয়ে বাজে মন্তব্যসহ নানা অভিযোগ করেছেন। সাবিনা শুরুতেই বলেছিলেন, দেশের মানুষ তাদের নিয়ে কটূক্তি করছে। সাবিনা বলেছিলেন, ব্যাপারটা আত্মসম্মানের, দেশের মানুষ যেভাবে মেয়েদের কটূক্তি করছে… বলেই কান্না করেন সাবিনা।

বৃহস্পতিবার বাফুফের কর্মকর্তারা যখন অফিস শেষ করে ভবন ছেড়ে চলে যান, সন্ধ্যায় সাবিনারা ৪ তলা থেকে নিচে নেমে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। তারা জানিয়েছেন, বুধবার বাফুফের সভাপতিকেও চিঠি দিয়েছেন। বাফুফে হতবাক হয়েছে চিঠি দিয়ে এক দিনও সময় দেননি সাবিনারা। তার আগেই হুমকি-ধমকি দিয়েছেন সবাই অবসরে যাবেন।

সাংবাদিকদের কাছে বাংলায় চিঠি দিয়েছেন আর বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়ালের কাছে পাঠানো চিঠি ছিল ইংরেজিতে। এই চিঠি নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। চিঠির ভাষা এবং শব্দ, বাক্যগঠন এবং অন্যান্য বিষয় যেভাবে লেখা হয়েছে তা নিয়েই সবার চোখে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। গুঞ্জন রয়েছে বাফুফের সাবেক টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলির নাম আসছে। তার লেখা চিঠি নারী ফুটবলারদের হাত হয়ে সভাপতির কাছে গেছে। বাফুফে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন প্রশ্ন ইংরেজিতে লেখা চিঠি আমাদের ক্যাম্পের খেলোয়াড়রা লিখতেই পারবেন না। এটা কোনো বিদেশির হাতে লেখা।

ব্রিটিশ কোচকে সরিয়ে দেওয়ার দাবির সামনে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বৃহস্পতিবার রাতেই অনলাইনে জরুরি সভা ডেকে ইমরুল হাসানকে চেয়ারম্যান করে সাত সদস্যের একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। আজ সেই কমিটি সভায় বসবে। এরই মধ্যে ইমরুল হাসানরা কমিটির সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। কাজ এগিয়ে রেখেছেন। গতকাল ইমরুল হাসান জানিয়েছেন তারা ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারকে ডাকবেন, সাবিনাদের ডাকবেন। নেপালে সাফ খেলতে গিয়ে কী কী হয়েছিল তা নিয়ে কথা বলবেন।

বাফুফের একাধিক সূত্রের খবর-নারী ফুটবলাররা এভাবে হুমকি-ধমকি দিতে পারেন না। যে কেউ ডাগ আউটে দাঁড়ালে সাফল্য আসবে’ এমন কথা বলাটা উদ্ধত আচরণের শামিল। আপনি যত বড় ফুটবলার হোন এ ধরনের কথা বলাটা লজ্জাজনক। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে এবং সঠিক পথে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বাফুফেকে। ব্রিটিশ কোচকে না সরিয়ে দিলে খেলোয়াড়রা অবসরে যাবেন-এমন প্রসঙ্গে তাবিথ আউয়াল জানিয়েছেন, তিনি একটা সুষ্ঠু সমাধান করতে চান। কোচ এবং খেলোয়াড়দের নিয়ে একটা সুন্দর সমাধানের পথ বের করতে চান।

অন্যদিকে বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান জানিয়েছেন, আমরা শুরুতেই কঠোর অবস্থানে যেতে চাচ্ছি না। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাইছি। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই বাংলাদেশের ফুটবলে মেয়েদের ভালো অবদান আছে। তাই বলে বাংলাদেশের ফুটবল কারো কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না।’

সাংবাদিকরা ইমরুলকে জানিয়েছেন, মেয়েরা সাফে খেলতে গিয়ে টিকটক করত, টিম বাস ছেড়ে দিয়েছে, তখনো একজন ফুটবলার টিকটক করা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, তারা ঢাকায় থেকে লোক নিয়ে গিয়ে ফেসবুকে তাদের প্রচারের কাজ করেছেন। অনুশীলন মাঠে গিয়ে সাংবাদিকরা দুরে দাঁড়িয়ে থাকতেন। আর তাদের লোকজন মাঠে ঢুকে ইন্টারভিউ করে ফেসবুকে দিয়েছেন, টিকটকের ছবি প্রচার করেছেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে রাতের বেলায় বাফুফের ক্যাম্প থেকে বাইরে গিয়ে টিকটক করেন, টাকা কামান। তাদের বিরুদ্ধে বাফুফে অবস্থান নেবে কি না। ইমরুল হাসান বলেন, ‘বিভিন্ন তরফ থেকে অভিযোগ আসবে। আমাদের কমিটির পক্ষ থেকে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব না। নারী উইংয়ের ব্যর্থতা আছে কি না খতিয়ে দেখব।’ বিশেষ কমিটি আগামী বৃহস্পতিবার রিপোর্ট দেবে বলে জানিয়েছেন ইমরুল হাসান।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print